Tuesday, August 21, 2007

শাল বন্দনাঃ বিভিন্ন জাতিসত্ত্বার কৃত্য আচারে, বিশ্বাসে এবং সংগ্রামে

জুয়েল বিন জহির


১.
শাল একটি বহুবর্ষজীবি বৃক্ষ জাতীয় উদ্ভিদ। Dipterocarpaceae পরিবার ভূক্ত শালগাছের বৈজ্ঞানিক নাম Shorea robusta । এক সময় বাংলাদেশ সহ অবিভক্ত ভারতবর্ষের মোট বনভূমির এক বিশাল অংশ জুড়ে ছিল শালবনে আচ্ছাদিত। বাংলাদেশের মধুপুর গড়, রাজশাহী, দিনাজপুর, গাজীপুর অঞ্চলে ছিল শালবনের বিস্তৃতি। আর সুদূর অতীতকাল থেকেই এই শালবন বা তার আশেপাশে বসবাসকারী মান্দি, কোচ, বর্মণ, ডালু, হদি, সাঁওতাল, ওরাওঁ, মাহাতো, সিং প্রভৃতি বিভিন্ন জাতিসত্ত্বার বর্ণাঢ্য জীবন-সংস্কৃতিতে শাল কেন্দ্রিক আপন আচার, আপন বিশ্বাস গড়ে উঠেছে। প্রাচীন কাল থেকেই প্রচলিত এই বিশ্বাস আর কৃত্য আচারাদির সাথে শালগাছ বা শালবনের নিবিড় যোগসূত্রতার দরুন বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর জীবন-সংস্কৃতিতে শালগাছ বা পুরো শালবন স্থান করে নিয়েছে পবিত্র উদ্ভিদ (Sacred Plant) বা পবিত্র স্থানের (Sacred Place) মর্যাদা। শুধুমাত্র ধর্মীয় বিশ্বাস বা আচারাদির মধ্যেই নয় কখনো কখনো এই শালগাছ বা শালবন হয়ে উঠেছে লড়াই-সংগ্রামের আহবান, ক্ষেত্র বা হাতিয়ার হিসেবে।

২.
বাংলাদেশে তথা পৃথিবীতে বসবাসরত বিভিন্ন জাতিসত্ত্বার মধ্যে অধিকাংশের ধর্মই কোনো পুঁথিভিত্তিক ধর্ম নয়। এদের যুগলালিত আপন বিশ্বাসে, আপন আচারে জড়িয়ে রয়েছে বিভিন্ন দেব-দেবতার অস্তিত্ত্ব। প্রকৃতির নিবিড় সান্নিধ্যে থাকবার দরুন জাতিসত্ত্বাসমূহের এই সব নানান দেব-দেবতারা স্বভাবতই প্রকৃতির বিভিন্ন উপাদান গাছ-পালা,পশু-পাখি ইত্যাদি নানান কিছুর মাধ্যমে মূর্ত হয়ে উঠেছে তাদের মানস চিন্তায়। যেমন সাঁওতাল এবং ওরাওঁদের প্রধান গৃহস্থ্য দেবতার নাম বোঙ্গা। সাঁওতাল, ওরাওঁরা যখন এই বোঙ্গার আরাধনা করে তখন বোঙ্গা দেবতার প্রতীক হিসেবে তারা ব্যবহার করেন শালগাছের ডাল। শুধুমাত্র দেবতার প্রতীক রূপেই নয়, ওরাওঁরা নিজেদের আদি ধর্মীয় বিশ্বাসকে পরিচয় দেয় শারণা বলে; আর কুরুখ ভাষায় এই শারণা মানে হলো শালগাছ। ওরাওঁরা শালগাছকে শারণা দেবী রূপেও পূজো করে থাকে। চৈত্র মাসের প্রতিপদ থেকে পূর্ণিমা পর্যন্ত যেকোন নির্দিষ্ট একটা দিনে অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে এই শারণা পূজা।

বাংলাদেশের বিভিন্ন জাতিসত্ত্বার মধ্যে নানান কামনা-বাসনাকে সামনে রেখে বিভিন্ন ধরনের ব্রতানুষ্ঠানের বেশ প্রচলন রয়েছে। আগেরকার গোষ্ঠীবদ্ধ সমাজ ব্যবস্থার প্রাচীন যাদুবিশ্বাস ও ধ্যান-ধারনার বিভিন্ন উপাদান আজও পরিলক্ষিত হয় জাতিসত্ত্বা সমূহের নৃত্য-গীত সমৃদ্ধ এইসব বৈচিত্র্যময় ব্রতানুষ্ঠানে। এইসমস্ত ব্রতের বিভিন্ন উপকরনের মাঝে শালগাছ তার স্বাতন্ত্র‌্য উপস্থিতিকে বজায় রাখতে পেরেছে। ইঁদপরবের ব্রত নামে সাঁওতালরা ভাদ্র মাসের শুক্লাদ্বাদশী তিথিতে ঐশ্বর্য্যলাভ, শস্যবৃদ্ধি এবং সর্বকাজে সাফল্য লাভের উদ্দেশ্যে পালন করে থাকে। ব্রতের দিন গ্রামের মাঝখানে বিশ থেকে পঁচিশ হাত লম্বা শালগাছ পুঁতে তার উপরে লাল শালু কাপড় দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়। নানান উপাচার সহযোগে শালগাছকে পূজা আর মাদল, ধামাসা, বাঁশি বাজিয়ে নাচ-গানের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গতা পায় ইঁদপরব ব্রতের সামগ্রিক আয়োজন।

কার্তিক মাসে কালীপূজার ঠিক আগের দিন গৃহপালিত পশুর সুস্বাস্থ্য ও মঙ্গল কামনায় সিরাজগঞ্জ, বগুড়া অঞ্চলে বসবাসকারী সিং জাতিসত্ত্বার লোকজন গড়াই ঠাকুরের পূজা করেন। গো সম্পদ বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে আয়োজিত এই পূজার নাম গোয়ালপূজা বা সোহরাই পূজা। সোহরাই পূজার প্রচলন অবশ্য সাঁওতাল, ওরাওঁ, মাহাতো, মুন্ডা প্রভৃতি জাতিসত্ত্বাসমূহের মধ্যেও বেশ প্রচলিত। সিং জাতিসত্ত্বার লোকজন গোয়াল পূজার সাতদিন আগে থেকেই গবাদি পশুর শিং-এ তেল মাখানো শুরু করেন। পূজার আগের দিন সন্ধ্যায় গ্রামের প্রতিটি গৃহস্তের গোয়ালঘরে জ্বালিয়ে রাখা হয় মাটির প্রদীপ। গোয়ালপূজার দিন গোয়াল ঘরের ভেতর গড়াই ঠাকুরের কাঠামো হিসেবে দেড় থেকে দুই ফুট লম্বা একটা শালগাছের খুঁটি গেঁড়ে নিয়ে তার সামনে সাজিয়ে রাখা হয় বিভিন্ন ভোগ সামগ্রী। এর আগে সকালবেলাতেই গোয়ালের সমস্ত ছাগল,মহিষ, গরুকে গোসল করিয়ে তাদের শিং এ তেল সিদুঁর মাখিয়ে দেন এবং গবাদি পশুকে খাওয়ানো হয় বিভিন্ন ধরনের পিঠা। লাঙ্গল, জোয়াল ও অন্যান্য কৃষি যন্ত্রপাতিতেও একই ভাবে তেল-সিদুঁর মাখানো হয়। মাটিতে চালের গুড়ির গোলায় আঁকা হয় নানান আলপনা। পূজার আনুষঙ্গিক প্রস্তুতি সম্পন্ন শেষে গৃহকর্তা শালগাছের খুঁটি তথা গড়াই ঠাকুরের কাছে গৃহপালিত পশুর সুস্বাস্থ্য ও মঙ্গল কামনা করে থাকেন ব্রত কথার মাধ্যমে। এরপর চলে খাওয়া দাওয়া, পুরো সিং জাতি মেতে উঠে নাচ-গান আর আনন্দ-উৎসবে।

ফাল্গুন মাসে যখন শালগাছের নতুন ফুলের সুভাসে চারপাশ মগ্ন তখন সাঁওতাল, ওরাওঁরা পালন করে ঐতিহ্যবাহী বাহা পরব বা শারহূল পরব। পরবের দিন পাহান বা পুরোহিত পূজোর উদ্দেশ্যে ঘরের ভেতর প্রবেশ করে নির্দিষ্ট স্থানে বসেন। তাঁর পাশে সিঁদুর, ধূপ, আতপ চাল, ফুল সহ শালগাছের শাখা ভর্তি কুলো হাতে বসেন পাহান স্ত্রী বা গৃহকর্তী। বৃষ্টির কামনা, ফসলের উন্নতি এবং সমাজের মঙ্গল কামনা করে পাহান পূজো শেষ করে শাল গাছের ডাল থেকে একটা ফুল নিয়ে নিজ স্ত্রী বা গৃহকর্তীর খোপায় গুঁজে দেন। পূজোর আনুষ্ঠানিকতা শেষ হলে পাহান ঘর থেকে বের হন। বের হওয়ার সময় ঘরের সম্মুখস্থ চালে শাল ফুল বেধে দিয়ে উঠোনে চলে আসেন। এর পর পাহানের সাথে করে লোকজন পুস্পসমেত শাল গাছের ডাল নিয়ে গ্রামের বাড়ি বাড়ি ঘুরতে থাকেন। সাঁওতাল, ওরাওঁরা শারহূল ফাল্গুন মাসে পালন করলেও অসুর, সিং জাতির লোকজনেরা করে বৈশাখ মাসে। মালপাহাড়িয়ারাও দেবতাকে উদ্দেশ্য করে শাল ফুল নিবেদনের এই উৎসব ফাল্গুন মাসেই পালন করে তবে তা ভিন্ন নামে; মালপাহাড়িদের এই পরবের নাম ফাগুয়া। মাহালি, মুন্ডারাও এই শারহুল পরব বেশ জাঁকজমকের সাথে পালন করে থাকেন। এই শারহুল পরবেই মেয়েরা বছরের নতুন শাল ফুল মাথায় পড়ার অনুমতি লাভ করে। শারহুল বা বাহা হওয়ার আগ পর্যন্ত সাঁওতাল, ওরাওঁ, মুন্ডা, সিং, মাহালি, মালপাহাড়িয়া রমনীদের জন্য শালফুল মাথায় গুজে রাখা ধর্মীয় ভাবে নিষিদ্ধ।

মধুপুর গড় অঞ্চলে যুগ-যুগান্তর ধরে বসবাসরত কোচ, বর্মণ, মান্দিদের জীবন,ধর্মীয় রীতিনীতি,সংস্কারের সাথে বলশাল ব্রিং জড়িয়ে রয়েছে ওতপ্রোতভাবে। বলশাল ব্রিং বা শালবন মান্দি জাতির হা.বিমা (জননী ভূমি)। তাদের খাদ্যাভ্যাস, নৃত্য, গীত ,পালাসহ বিভিন্ন আমুয়াতে শাল গাছের ফুল-ফল, ডাল-পালার রয়েছে বর্ণাঢ্য ব্যবহার। মান্দি জাতির জীবন-জীবিকা, আচার, বিশ্বাস থেকে বলশাল ব্রিং কে পৃথক করে দেখবার জো নেই। সাংসারেক মান্দিরা সালজং, মিসি, সুসিমি, চুরাবুদি, গুয়েরা, রাক্কাশি সহ বিভিন্ন মিদ্দির (দেবতার) আমুয়া(পূজো) করে থাকেন। প্রতিটি আমুয়াই উদ্দেশ্য এবং কৃত্য নিয়ম-কানুনে স্বাতন্ত্র‌্য হলেও পূজোর প্রয়োজনীয় উপকরন হিসেবে সাসাৎ এর ব্যবহার লক্ষণীয়। আর এই সাসাৎ তৈরীতে তারা ব্যবহার করেন শালগাছের বাঁকল। সাসাৎসুয়া করলে দেবতারা সন্তুষ্ট হন বলে মান্দিরা তাদের প্রায় প্রত্যেক আমুয়াতেই সাসাৎ ব্যবহার করে থাকেন। কেননা সাংসারেক মান্দিরা বিশ্বাস করেন যে, একদা মান্দি মিদ্দি (দেবতা) মিসি আর সালজং দুই ভাই এই শালগাছের বাঁকল থেকে তৈরী সাসাৎ পোড়া ধোঁয়া পান করেই সন্তুষ্ট হয়েছিলেন রাংদি বিমা রাই মিচ্চিক নাম্নী এক বিধবা বৃদ্বার উপর। সন্তুষ্টির ফল স্বরূপ ঐ বৃদ্বার ঘরেই সর্বপ্রথম জন্ম দিয়ে গিয়েছিলেন মি.নিমা (ধানের মা) কে। সেই মি.নিমা থেকেই পরবর্তীতে জন্ম নেয় মি.মিদ্দিম, মি.সারাং, মি.খচ্চু, মি.মা, মি.নেংগেল, মি.মাথেক, মি.জেংগেম সহ হাজার হাজার প্রজাতির মি (ধান)।

হা.বিমা সাংসারেক মান্দিদের কাছে অত্যন্ত পবিত্র স্থান হিসেবে বিবেচিত, আর তাই হা.বিমার জীববৈচিত্র্য যাতে অক্ষুন্ন থাকে সেজন্য মান্দিরা আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে আয়োজন করেন আসংদেনা আমুয়ার। বর্ষাকালে বৃষ্টি স্নাত হা.বিমা তথা শালবনের নরম মাটি ভেদ করে গজিয়ে উঠে নানান প্রজাতির উদ্ভিদরাজি, তখন নিদ্দ্র্‌ষ্িট দিনে খামালের নেতৃত্বে নতুন গাছের চারা হাতে মান্দিরা সবাই প্রবেশ করেন বলশাল ব্রিং (শালবন) এর গহীনে। নির্ধারিত স্থানে খামাল কর্তৃক খ্রিতা (মন্ত্র) পাঠ ও অন্যান্য নিয়ম-কানুন পালন শেষে সেখানে সবাই নতুন গাছের চারা লাগিয়ে দেন। আর এভাবেই বছর বছর আসংদেনা সহ বিভন্ন আমুয়ার মাধ্যমে সাংসারেক মান্দিরা শালবনের জীববৈচিত্র্য রক্ষা করে চলেছেন প্রথাগত ভাবেই।

আদিবাসী জাতিসত্ত্বা সমূহের গোত্র প্রতীক বা টোটেম প্রথা আজও বর্তমান। একেকটি জাতি বেশ কয়েকটি গোত্রে বিভক্ত হলেও প্রতিটি গোত্রেরই রয়েছে আলাদা আলাদা টোটেম বা গোত্র প্রতীক। একেকটি গোত্রের টোটেম সেই গোত্রের পরিচয়কে সমষ্টিগতভাবে বহন করে। আর যে বস্তুগুলো টোটেম হিসেবে ব্যবহৃত হয় সেগুলো সাধারণত উদ্ভিদ বা প্রাণিজগতেরই কোন গণ বা প্রজাতি হয়ে থাকে। যে গোত্রের যে টোটেম তারা সেই টোটেম কে রক্ষা করে থাকেন পরম বিশ্বাসে। ভুমিজ সিং এবং খাড়িয়াদের গুলগু গোত্রের টোটেম হলো শালগাছ। গুলগু গোত্রের লোকদের জন্য শালগাছের কোনরূপ ক্ষতিসাধন তাই ধর্মীয় ভাবেই নিষিদ্ধ।

পূর্ব পুরুষদের পূজা, সম্মান করা বা স্মৃতি ধরে রাখার রীতি পৃথিবীর প্রায় সব জাতিরসত্ত্বার মধ্যেই প্রচলিত রয়েছে। পাত্রদের থিবাম, চাকমাদের ভাতদ্যা পূজা, সাঁওতালদের তেলনাহান, ওরাওঁদের পিতৃতর্পণ, খাসিয়দের ইয়াওহে, থাউলাং, উ সুইডানিয়া -দের উদ্দেশ্যে কৃত্য প্রস্তর পূজা কিংবা বাঙালি মুসলমানদের কুলখানি ইত্যাদি সবগুলোই পূর্ব পুরুষদের আত্মার উদ্দেশ্যে কৃত্য আচার। পুর্ব পুরুষের প্রতীক হিসেবে বাড়ির একপাশে খি.ম্মা গেড়ে রাখার রীতি রয়েছে মান্দি সমাজে। আর প্রাচীন কাল থেকেই মান্দিরা এই খি.ম্মা তৈরীর উপকরন হিসেবে বেছে নিয়েছিল বলশাল ফাং (শালগাছ) এর ডাল। মান্দিদের মধ্যে কেউ মারা গেলে তার পরদিনই মৃত ব্যক্তির স্মৃতি ধরে রাখার জন্য খি.ম্মা গাড়তে হয়। যে বাড়িতে যত জন মারা যাবে তাদের প্রত্যেকের জন্যই আলাদা আলাদা খি.ম্মা গাড়তে হয়। বলশাল ফাং এর ডাল থেকে বাকল ছাড়িয়ে নিয়ে তাতে খোদাই করে কারুকার্যময় খি.ম্মা তৈরী করেন মান্দিরা। খোদাই করা কারুকার্য দেখেই বোঝা যাবে যার উদ্দেশ্যে খি.ম্মা গাড়া হয়েছে সে পুরুষ না মহিলা বা সে কত বছর বয়সে মারা গেছেন ইত্যাদি।

সাঁওতাল গ্রামে কোন অঘটন ঘটলে তার ন্যায় বিচারের ব্যবস্থা করেন পাহান। নির্দিষ্ট দিনে গ্রামের সবাইকে সালিশের জন্য আহবান করা হয়। সালিশের দিনে পাহানসহ সবাই এসে জড়ো হন জাহের থানে বা শালগাছের তলাতে। কেননা পূর্বপুরুষদের আত্মা জাহের থানে বা শালগাছের তলাতে অবস্থান করেন; আর পূর্ব পুরুষদের আত্মার উপস্থিতিতে ন্যায় বিচারের কখনো লংগিত হবেনা এমনটই বিশ্বাস প্রচলিত রয়েছে সাঁওতাল সমাজে।

বিবাহ বিচ্ছেদ নিয়ে একেক জাতির ভিতর একেক ধরনের নিজস্ব নিয়ম বা প্রথা রয়েছে। সিং জাতির মধ্যে বিবাহ বিচ্ছেদের পরিমান খুব কম। তবে উপযুক্ত কারন থাকা সাপেক্ষে পাহান বিচ্ছেদ কার্য সম্পাদনে সম্মতি দেন। সালিশের দিন গ্রামের গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের সামনে স্ত্রীর হাতের নোয়া নিজ হাতে খুলে নেন। এরপর একটি শাল পাতায় পানি ছিটিয়ে স্বামী সেই পাতাটি ছিঁড়ে ফেলে। আর এভাবে শাল পাতা ছিঁেড় ফেলার সাথে সাথেই স্বামী-স্ত্রীর মধ্যকার সম্পর্ক ছিন্ন হলো বলে ধরে নেয়া হয়।

৩.
শুধুমাত্র আপন বিশ্বাস বা আপন আপন সংস্কারেই নয় শালগাছ বা শালবন কখনো কখনো বিভিন্ন জাতিসত্ত্বার মাঝে দেখা দেয় লড়াই-সংগ্রামের এক ঐতিহাসিক উপাদান হয়ে। আপন অধিকার আদায়ের সংগ্রামে শালগাছের ডাল একসময় হয়ে উঠেছিল সংগ্রামী আহবানের প্রতীক হিসাবে। ১৮৫৫ সাল । ইতিহাসের এক উল্লেখযোগ্য আখ্যান রচিত হয়েছিল সিধুঁ, কানু, চাঁদ ও ভৈরব মাঝির নেতৃত্বে। ইংরেজ রাজের অবাধ শোষণ-উৎপীড়ন এবং জমিদার-মহাজনদের সীমাহীন অত্যচারের বিরুদ্ধে সাঁওতাল হুলের ডাক দিয়েছিল সিধুঁ-কানু। এই সংগ্রামে সমস্ত সাঁওতালদের ঐক্যবদ্ধ করার জন্য সিধুঁ- কানু ঠাকুরের নির্দেশ লাভের কথা প্রচার করেছিলেন। বিদ্রোহ শুরুর আগে ১৮৫৫ সালের ১৫ জুন সিধুঁ-কানু গ্রামে গ্রামে শালগাছের ডাল গিরা পাঠিয়েছিলেন। অরণ্যভূমির সমস্ত গ্রামে গ্রামে, বনে বনে, পাহাড়ে পাহাড়ে, মাঠে ঘাটে ছড়িয়ে পড়েছিল গিরার আহবান- দেলা দোমেল দোমেল, দেলা লগন লগন ।পবিত্র শাল ডালের গিরার আহবানে মাত্র ১৫ দিনের মাথায় ৩০ জুন সংগ্রামী চেতনায় টগবগে প্রায় দশ হাজার সাঁওতাল নারী-পুরুষ তীর-ধনুক, টাঙ্গি-কুড়াল,ধামসা, মাদল, বাঁশী সহকারে জমায়েত হন ঐতিহাসিক ভগনাডিহি গ্রামে। উল্লেখ যে, শাল গিরার সাথে সাথে সিদুঁ-কানু প্রেরিত আতপ চাল, তেল, সিন্দুর শালপাতার তৈরী বাটিতে করে গ্রামের পর গ্রাম ঘুরতে থাকে এবং প্রচার করা হতে থাকে যে, দেবতারা লড়াইয়ে সাঁওতালদের শক্তি বৃদ্ধি করবেন। সেদিন ভগনাডিহি গ্রামে সিধুঁ-কানুর কন্ঠে মুক্তির ডাক শুনে হাজার হাজার অরণ্য সন্তানের কন্ঠে ধ্বনিত হতে থাকে “দেলায়া বিরিদ্‌ পে, দেলায়া তিঙ্গুন পে” (জাগো, ওঠো, সাঁওতালরাজ কায়েম করো)। হাজার হাজার সাঁওতাল শপথ নেয় ইংরেজরাজ,জমিদার-মহাজনদের দুঃশাসনের নিঙর ভাঙ্গার। এরপর ইতিহাস সৃষ্টির পালা; বাঙলা ও বিহারের একপ্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত জমিদার-মহাজন-ইংরেজ বিরোধী সংগ্রামের ধ্বনিতে কাঁপিয়ে দেবার, সিধুঁ-কানুর সাহসী নেতৃত্বে শাল গিরার আহবানে বুকের রক্ত ঢেলে দেবার। হাজার হাজার সাঁওতাল নারী-পুরুষ নিজেদের তাঁজা রক্তে রচনা করেছিলেন স্বাধীনতা সংগ্রামে আত্মত্যাগের মহান ঐতিহ্যগাঁথা ।

শালকেন্দ্রিক লড়াই-সংগ্রামের জীবন্ত দৃষ্টান্ত রয়েছে মধুপুর গড়ের মান্দি,কোচ,বর্মণ প্রভৃতি জাতিসত্ত্বা সমূহের মধ্যেও। মান্দি জাতি শালবনকে কেন্দ্র লড়াই সংগ্রাম করে চলেছে যুগ যুগ ধরে। আগেই বলা হয়েছে শালবন হলো মধুপুর গড়ের মান্দিদের হা.বিমা (জননী ভূমি)। মধুপর গড়ে মান্দি ছাড়াও রয়েছে কোচ, বর্মণ জাতিসত্ত্বার বসবাস। নিজ হা.বিমাতে হাজার হাজার বছর ধরে বসবাসরত মান্দিদের জীবন-জীবিকা, ধর্ম-সংস্কৃতি সবকিছুর সাথেই বলশাল ব্রিং বা শালবন অঙ্গাঅঙ্গী ভাবে জড়িত। নিজ জননী ভূমিকে রক্ষার জন্য সেই ১৯৪৭ সালের পর থেকেই রচনা করে চলেছিল একের পর এক প্রতিরোধের। ১৯৫৬ সালের উচ্ছেদ নোটিশ, ১৯৬২সালের মধুপর বনে ৪০ বর্গমাইল এলাকা নিয়ে ন্যাশনাল পার্ক প্রতিষ্ঠার প্রকাশ্য ঘোষণা, ১৯৬৮ সালে গভর্ণর ও বনমন্ত্রীর উচ্ছেদ নির্দেশ, ১৯৬৯ সালের উচ্ছেদ নোটিশ, ১৯৭৪ সালে বনকর্মকর্তা কর্তৃক লুটপাটের তান্ডব, ১৯৭৭ সালে বনবিভাগ কর্তৃক শালবনের ভিতর কৃত্রিম লেক তৈরীর নামে কোচ-মান্দিদের উচ্ছেদ প্রক্রিয়া, ১৯৭৮ সালে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক ন্যাশনাল পার্ক প্রকল্পের আওতাধীন এলাকার হাজার হাজার বছর ধরে বসবাসরত কোচ, মান্দি, বর্মণদের উচ্ছেদ নোটিশ জারি, ১৯৭৮ সালে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কর্তৃক ভেড়া চড়ানোর নাম করে শালবন এলাকায় আদিবাসীদের ভূমি দখল, ১৯৭৯ সালে বনায়নের নামে মান্দিদের উপর নির্যাতন, ১৯৮১ সালে ময়মনসিংহ বিভাগীয় বনকর্মকর্তার বিট অফিস প্রতিষ্ঠা ও তুঁত গাছ রোপনের নামে মান্দিদের বৈধ ভোগ দখলকৃত শালবনের ১০৮ একর জমি দখল, ১৯৮৪ সালে টেলকীপাড়া ও নয়াপাড়া গ্রামে শালবন কে ধ্বংস করে মান্দিদের নিজ জমিতে বিমান বাহিনীর জন্য ফায়ারিং রেঞ্জ প্রতিষ্ঠার বিরুদ্ধে। আর এই প্রতিরোধ-সংগ্রামের ধারাবাহিকতাতেই ২০০৪ সালের ৩ জানুয়ারি মান্দি-কোচ-বর্মণেরা মধুপুরের শালবনে জড়ো হয়েছিল রাষ্ট্রীয় তত্ত্বাবধানে জীববৈচিত্র্য রক্ষার জন্য ইকোপার্কের নামে হা.বিমাকে দেয়াল দিয়ে ঘেরার প্রতিবাদ জানাতে, হা.বিমার জীববৈচিত্র্য ও নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার্থে। খা সাংমা খা মারাক ধ্বণিতে হাজার হাজার বনবাসীদের দৃপ্ত শ্লোগানে যখন মুখরিত হচ্ছিল পুরো শালবন এলাকা তখনই নেমে আসে রাষ্ট্রের শাসকগোষ্ঠীর ভয়াবহ নিপীড়ন। বনবাসিন্দাদের সেই মিছিলের উপর বনবিভাগের বনরক্ষী ও পুলিশের গুলিতে ঘটনাস্থলেই শহীদ হন জয়নাগাছা গ্রামের বীর যুবক পীরেন স্নাল; আহত হন উৎপল নকরেক, এপিল সিমসাং, শ্যামল চিরান ও রীতা নকরেক সহ আরো অনেকেই। শালবন তথা হা.বিমাকে রক্ষার জন্য সেদিন বনবাসীদের যে তেজদীপ্ত প্রতিরোধ-সংগ্রামের নতুন অধ্যায় রচিত হয়েছিল পীরেন স্নালের রক্তে, সেই সংগ্রামী চেতনাকে আজও অক্ষুন্ন রেখেছে হা.বিমার সন্তানেরা। তারা নিরন্তর লড়াই করে চলেছেন তাদের পবিত্র হা.বিমাকে রক্ষার জন্য, নিজেদের জীবন-সংস্কৃতি ও অস্তিত্ত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য।

৪.
শালবন বা তার আশপাশে বসবাসরত বিভিন্ন জাতিসত্ত্বার যে নানান লোকাচার-বিশ্বাস প্রচলিত রয়েছে হাজার হাজার বছর ধরে তার অনেকটাই শালবনের উপর যে কতটা নির্ভরশীল তা সহজেই অনুমেয়। এই শালবন একদিকে যেমন তাদের বিশ্বাসে, কৃত্য আচারাদির সাথে ঘনিষ্ঠ, তেমনি একইভাবে ঘনিষ্ট তাদের অস্তিত্ত্বের সাথেও। শালগাছ বা শালবনকে কোনভাবেই বিভিন্ন জাতিসত্ত্বার চলমান জীবন-সংস্কৃতি থেকে পৃথক করে দেখবার উপায় নেই। শালগাছ বা শালবন হয়ে উঠেছে বিভিন্ন জাতিসত্ত্বার বর্ণাঢ্য জীবন-সংস্কৃতির বা তাদের অস্তিত্ব নির্ণয়ের এক মূর্ত প্রতীক হিসেবে। এই যখন সাঁওতাল, ওরাওঁ, মাহাতো, সিং, বসাক, কোচ, বর্মণ, মান্দি, হদি, ডালুদের সাথে শালবৃক্ষের সম্পর্কের ধরন-ধারন তখন এর বিপরীতেই আমরা দেখতে পাই স্বয়ং রাষ্ট্রযন্ত্র কর্তৃক এই নিবিড় সম্পর্কের ভিত্তিমূলে আঘাত হানার নানান ধরনের ধারাবাহিক সব আয়োজনের। বিশেষজ্ঞদের মতে বাংলাদেশ রাষ্ট্র গঠনের পরও যেখানে ঢাকা, রংপুর, ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, দিনাজপুর, এবং রাজশাহী জেলার মোট ১,২০,০০০ হেক্টর ভূমিতে শালবন ছিল বর্তমানে সেখানে তার ( ১,২০,০০০ হেক্টরের) ১০% এলাকায় শালবনের অস্তিত্ব রয়েছে। শুধুমাত্র টাঙ্গাইল জেলাতেই ১৯৭০ সাল থেকে ১৯৯০ সাল এই বিশ বছরে শালবনের আয়তন কমেছে ২০,০০০ হেক্টর থেকে ১,০০০ হেক্টরে। আর এই সংকোচনের মাত্রা দিনে দিনে আরো অধিক থেকে অধিকতর হচ্ছে। এই যে শালবন এলাকার দ্রুত সংকুচিত হয়ে যাওয়া এর জন্য অনেক কারনই দায়ী। তবে শালবনের এই দ্রুত সংকোচনের পেছনে বনবিভাগ বা রাষ্ট্র কর্তৃক বিভিন্ন সময়ে গৃহীত নানান অবৈজ্ঞানিক প্রকল্পসমূহ অনেকাংশেই দায়ী। রাষ্ট্রের গৃহীত ন্যাশনাল পার্ক উন্ন্‌য়ন প্রকল্প, রাবার বাগান উন্নয়ন প্রকল্প, উডলট প্রকল্প, ইকোপার্ক প্রকল্প, সোস্যাল ফরেষ্ট্রি ইত্যাদির সব গুলোই ছিল শালবন কে ধ্বংস করে দেয়ার বাহারি সব আয়োজন। যেখানে প্রাকৃতিক শালবনকে বনবিভাগ সিলভিকালচারের মাধ্যমে সহজেই টিকিয়ে রাখতে পারতো সেখানে সিলভিকালচার না করে উডলট, রাবার বাগান বা ইকোপার্কের মতন প্রাকৃতিক বন বিধ্বংসী সব আয়োজনের সার্থক বাস্তবায়নে ব্যস্ত; বনকর্তারা ব্যস্ত কালোবাজারে শালবনের সম্পদ পাচারে। এই যে শালবনকে ধ্বংস করে দেওয়ার নানান আয়োজন তা তো শুধুমাত্র শালবনকেই ধ্বংস করছে না; তা আসলে প্রত্যক্ষ ভাবেই শালবনের সাথে যাদের রয়েছে অকৃত্রিম যোগসূত্র সেই সমসত কোচ, মান্দি, হদি, বর্মণ, সাঁওতাল, ওরাওঁ, সিং, মাহাতো, বসাক, মুন্ডা জাতিসত্ত্বাসমূহের বর্ণাঢ্য জীবন-সংস্কৃতিকে ধ্বংস করে দিচেছ- বিপন্ন করে দিচ্ছে তাদের অস্তিত্বকে। আর রাষ্ট্রের এইসব বাহারি আয়োজন দেখে মনে হয়-

এই রাষ্ট্র চায় না সোহরাই, দেনমারাং.আ, বাহা, সারহুল, আসংদেনা, ওয়ান্না, গালমাকদু.আ, হাবা আমুয়া, ফাগুয়া, বড়াপাহাড় পূজা, ইঁদপরবের উৎসব মুখর কোন পবিত্রতা।
এই রাষ্ট্র চায় না আ.দুরি, দামা, রাং, ধামসা, সানাই, বাঁশি, মাদলের কোন সুর।
এই রাষ্ট্র চায় না হাস্তর, ঝুমুর, দিগ্গ্যিবান্দি, শেরেনজিং, রেরে, আজিয়ার কোন গীতি-কথা, পালা।
এই রাষ্ট্র চায় না দুখ্রো সুয়া, নুমিল মিসায়া কিংবা ঝুমুরের কোন ছন্দ-হিল্লোল।
এই রাষ্ট্র চায় না ধুমকুড়িয়া, নকমান্দি, আখড়া, নকপান্থে, দেল্লাং থে.ক্কা,মিজামের মতন কোন কাঠামো।
এই রাষ্ট্র চায় না দকমান্দা,দকশাড়ির নিপুন কারুকাজ।
এই রাষ্ট্র চায় না দিখ্যা, দিকথম, খ্যাংগ্রেং, রাও, ফং।

কিন্তু এই রাষ্ট্র চাক বা না চাক এই রাষ্ট্রের আদিবাসীরা , যাদের জীবন-সংস্কৃতি শালবন বা শালগাছের নিবিড় আলিঙ্গনে বেড়ে উঠেছে তারা তাকে ধ্বংস হতে দিতে পারে না। তারা তাদের সোহরাই, ফাগুয়া, বাহা, সারহুল, ওয়ান্না, গালমাকদু.আ, আসংদেনা, ইঁদপরব কোন কিছুকেই হারাতে দিতে চান না। নিজেদের হাবা, বসত, ক্ষেত, জমিন কোন কিছুই হাতছাড়া করতে চান না। এজন্য তারা যুগে যুগে লড়াই করেছেন, করছেন এবং করে চলবেন আজীবন নিজেদের অস্তিত্ত্ব রক্ষার জন্য, শালবনের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য, শালকেন্দ্রিক জীবন-সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য।

সূত্রঃ

সাক্ষাতকারঃ
১.জনিক নকরেক(৯৪)-গ্রাম-চুনিয়া, ডাক-পীরগাছা,থানা-মধুপুর,জেলা-টাঙ্গাইল।
২.জগদীশ চন্দ্র সিং (৬০)-গ্রাম-সরাবপুর,ডাক-আমশড়া,থানা-তাড়াশ,জেলা-সিরাজগঞ্জ।
৩. মানিক চন্দ্র সিং(৯৫)-গ্রাম-সাহাপাড়া,ডাক-আমশড়া, থানা-তাড়াশ,জেলা-সিরাজগঞ্জ।
৪.সমের চন্দ্র মাহাতো(৫০)-গ্রাম-শ্যামেরঘন, ডাক-আমশড়া, থানা-রায়গঞ্জ, জেলা-সিরাজগঞ্জ।
৫.স্বপন কুমার ওরাওঁ(২৮)-গ্রাম-খোদমাধাইনগর, ডাক-আমশড়া,থান-তাড়াশ, জেলা-সিরাজগঞ্জ।

বইপত্রঃ
৬.সাঁওতাল গণসংগ্রামের ইতিহাস-ধীরেন্দ্রনাথ বাস্কে।। পার্ল পাবলিশার্স; ২০৬,বিধান সরনী, কলিকাতা।। ফেব্রুয়ারি ১৯৭৬।
৭.উত্তরবঙ্গের আদিবাসী লোকজীবন ও লোকসাহিত্যঃ ওরাওঁ- ডঃ মুহম্মদ আবদুল জলিল।। বিশ্বসাহিত্য ভবন; বাংলাবাজার, ঢাকা।। wW‡m¤^i ১৯৯৯।
৮. বাংলার ব্রতপার্বণ-ডঃ শীলা বসাক।। পুস্তক বিপনি; কলিকাতা।। মে ১৯৯৮।
৯.আদিবাসী ভাষা ও সংস্কৃতিঃ প্রসঙ্গ নদীয়া জেলা-ডঃ শিবানী রায় (মন্ডল)।। পুস্তক বিপনি; কলিকাতা।। অক্টোবর ২০০২।
১০.বিপন্ন ভূমিজঃ অস্তিত্বের সংকটে আদিবাসী সমাজ-বাংলাদেশ ও পূর্বভারতের প্রতিচিত্র-সম্পাদনা-মেসবাহ কামাল, আরিফাতুল কিবরিয়া।। গবেষণা ওনন্নয়ন কালেকটিভ; এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।। এপ্রিল ২০০৩

(This article was published on Special publication on 25 years completion of JAC-Jhum Aesthetics Council, editor-Sisir Chakma; published by- JAC-Jhum Aesthetics Council, Rangamati, February 2005)



No comments: